১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো পাননি সরকারি ভবন, গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: তিনবার বরাদ্দ এসেও ফেরত, ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেডে চলছে পাঠদান
মাগুরা প্রতিনিধি
১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৮৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো পায়নি একটি নতুন ভবন। চরম অবহেলা আর জরাজীর্ণতার মধ্যেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এর শিক্ষা কার্যক্রম। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখা সাইনবোর্ড থাকলেও, কাছে গেলে বোঝার উপায় নেই এটি একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পূর্বের ভবন পরিত্যক্ত হওয়ার পর আর কোনো নতুন ভবন নির্মিত না হওয়ায় বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টিনশেড ঘরে চলছে পাঠদান।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১, ২০১২-১৩ ও ২০১৬-১৭ সালে সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হওয়া এবং বরাদ্দ আসার পরেও রহস্যজনক কারণে ভবন নামক আলোর মুখ দেখেনি কর্তৃপক্ষ। বারবার বরাদ্দ এসে ফিরে যাওয়ার ফলে টিনশেড ভবনে চরম কষ্ট আর অস্বস্তিতে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। মধুমতি নদীর কিনারে অবস্থিত এবং চারপাশে নানা স্থাপনা থাকা সত্ত্বেও একটি ভবনের অভাবে পুরাতন টিনশেডেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
জরাজীর্ণ টিনশেড ভবনে তীব্র গরমে পর্যাপ্ত ফ্যানের অভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে অস্বস্তিতে ভোগেন। ঝড়ো হাওয়া বা বৃষ্টি এলে কক্ষের ভেতরে ক্লাস নেওয়ার কোনো পরিবেশই থাকে না। এমন প্রতিকূল পরিবেশে দিন দিন কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৭০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষিকা রয়েছেন ৫ জন। এত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার মান ধরে রেখেছে।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজী মোহাম্মাদ বাবু মোল্লার ছেলে, বিশিষ্ট সমাজ সেবক মো: জিয়াউল হক বাচ্চু, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ফলে এ বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নেই। শিক্ষার্থীদের মান উপযোগী করে গড়ে তুলতে জরুরি ভিত্তিতে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানাই।"
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা বিউটি বলেন, "ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে পুরাতন টিনশেড ভবনে চরম কষ্টে পাঠদান করাতে হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় প্রাণহানিসহ বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ৩ বার সয়েল টেস্ট হওয়া সত্ত্বেও কেন বরাদ্দ ফিরে গেলো, তা বুঝতে পারলাম না। অনুকূল পরিবেশ ও শিক্ষার মান উন্নয়নে দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি।"
এ বিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার সাহা বলেন, "বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। তবে নদী নিকটবর্তী হওয়ায় সম্ভবত প্রকল্প ফেরত গেছে। খোঁজ-খবর নিয়ে নতুন ভবন নির্মাণসহ নানাবিধ সমস্যা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
রাজনীতি, প্রশাসনিক জটিলতা নাকি নদী নিকটবর্তী হওয়ার কারণ— ঠিক কী কারণে ৮৪ বছরের পুরনো বিদ্যালয়টি বারবার বরাদ্দ পেয়েও ভবন নির্মাণে ব্যর্থ হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশে পাঠদানের সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি এলাকাবাসীর।